টেস্ট মর্যাদা পেল বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল
প্রকাশিত : 08:36 AM, 3 April 2021 Saturday

দুই দশক আগে (২০০০ সাল) বাংলাদেশ পুরুষ ক্রিকেট দল টেস্ট মর্যাদা লাভ করে। সে বছর সবেমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ছেলেরা ২১ বছরে পা দিয়েছে। এতদিন পর টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরাও। বৃহস্পতিবার আইসিসির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয় পূর্ণ সদস্যদের স্থায়ীভাবে ওয়ানডে ও টেস্ট মর্যাদা দেয়ার। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে জিম্বাবুইয়ে ও আফগানিস্তান
মহিলা ক্রিকেট দলও টেস্ট মর্যাদা পাচ্ছে। সবমিলিয়ে এখন মহিলাদের টেস্ট দল হলো ১৩টি। ২০১১ সালে ওয়ানডে ও ২০১২ সালে টি২০ ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করার পর এখন টেস্ট মর্যাদা পেয়েও দারুণ খুশি বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটাররা। আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মহিলা ক্রিকেট উইংয়ের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানিয়েছেন, টেস্ট মর্যাদার ঘোষণা আসলেও এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালভাবে সার্বিক প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চলতি বছরেই বাংলাদেশের মেয়েদের টেস্ট খেলানোর।
২০১১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। সে বছর নবেম্বরে মহিলা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচটি ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পরের বছর আগস্টে ডাবলিনে নিজেদের প্রথম টি২০ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপর থেকে মহিলা ক্রিকেটকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বিসিবি। যদিও গত ১০ বছরে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয়নি বাংলাদেশের মেয়েদের। সাকুল্যে মাত্র ৩৮ ওয়ানডে খেলে ৯টি জয় ও ২৭ পরাজয়ের পরিসংখ্যান লেখা হয়েছে। তবে ৯ বছরে সবমিলিয়ে ৭৫ টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। ২৭ জয়ের বিপরীতে আছে ৪৮ পরাজয়। এরমধ্যেই সেরা সাফল্য হিসেবে ২০১৮ সালে মেয়েদের টি২০ এশিয়া কাপ শিরোপা ঘরে তোলে বাংলাদেশের মেয়েরা। দেশের পুরুষ ক্রিকেটে যতটা পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ-সুবিধা তার সিকিভাগও পায়নি বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটাররা। তবু স্বল্প সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দলটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এগিয়ে চলেছে গত ১০ বছর ধরে। এখন দায়িত্ব বিসিবির। এ বিষয়ে উইমেন্স উইং প্রধান নাদেল বলেন, ‘আইসিসিকে ধন্যবাদ আমাদের এই সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আইসিসির এই স্বীকৃতির কারণে আমাদের সবার দায়িত্বও বেড়ে গেল।’
২০০০ সালে আইসিসির পূর্ণ সদস্য হলেও শুধু একটি ভালমানের দল গড়ে তুলতেই আরও ১০ বছর পেরিয়ে যায়। তখনও ওয়ানডে স্ট্যাটাস না পাওয়ার কারণে বেশকিছু ম্যাচ খেলে নিজেদের প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। অবশেষে ২০ বছর পার করে বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদার টেস্ট ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতাও পেয়ে গেল বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। আইসিসি তাদের বার্তায় বলেছে, ‘আইসিসির পূর্ণাঙ্গ মহিলা ক্রিকেট খেলুড়ে সদস্যদের স্থায়ীভাবে ওয়ানডে এবং টেস্ট স্ট্যাটাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’ তাই দারুণ খুশি টি২০ অধিনায়ক সালমা খাতুন, ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা আহমেদ ও মহিলা ইমার্জিং দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। এছাড়া বাকি ক্রিকেটাররাও উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন। সালমা তার বার্তায় বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদা পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। আশাকরি এটা মেয়েদের ক্রিকেটকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ রুমানা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য ভাল খবর। আর এই টেস্ট মর্যাদার মাধ্যমে আমাদের নারী ক্রিকেট পূর্ণতা পেয়েছে। আমরা এই টেস্ট মর্যাদার মাধ্যমে আমাদের ক্রিকেটটাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ জ্যোতি বলেছেন, ‘ক্রিকেটের ঐতিহ্যবাহী ফরমেট টেস্ট ক্রিকেটে আমরা অন্তর্ভুক্ত হতে পেরে অনেক গর্বিত ও আনন্দিত। অবশ্যই এটি বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’
এখন অপেক্ষা প্রথম টেস্ট খেলার। মেয়েদের টেস্ট ৪ দিনের। কিন্তু সাধারণত মেয়েদের টেস্ট ম্যাচ খুব বেশি দেখা যায় না। গত ১৪ বছরে হয়েছে মাত্র ৬ টেস্ট, খেলেছে মাত্র ৫ দল- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও হল্যান্ড। নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এই সময় খেলেনি কোন টেস্ট। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ১৯৩৪ সালে, নিউজিল্যান্ড ১৯৩৫, দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৬০, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারত ১৯৭৬, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ১৯৯৮ সালে, আয়ারল্যান্ড ২০০০ ও হল্যান্ড ২০০৭ সালে প্রথম টেস্ট খেলে। ইংল্যান্ড সর্বাধিক ৯৫টি, অস্ট্রেলিয়া ৭৪, নিউজিল্যান্ড ৪৫, ভারত ৩৬, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১২ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ১২ টেস্ট খেলেছে। পাক মেয়েরা ৩ টেস্ট খেললেও আইরিশ, ডাচ ও লঙ্কান মেয়েরা এখন পর্যন্ত ১টি করেই টেস্ট খেলেছে। বাংলাদেশের মেয়েরা কবে প্রথম টেস্ট খেলবে এ বিষয়টি নিয়ে বিসিবির মহিলা ক্রিকেট উইং চেয়ারম্যান নাদেল বলেছেন, ‘টেস্ট মর্যাদা দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত অফিসিয়াল যেসব প্রক্রিয়া রয়েছে তা এখনও সম্পন্ন হয়নি। যদি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে, সেক্ষেত্রে এ বছরই টেস্ট খেলার একটা আশা আমরা করতে পারি।’
শেয়ার করে সঙ্গে থাকুন, আপনার অশুভ মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক গণঅধিকার'কে জানাতে ই-মেইল করুন- dailyganoadhikar@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
দৈনিক গণঅধিকার'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।